মধুপুরের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

First Online Newspaper in Madhupur

ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি কাটার যেন উৎসব চলছে

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৮১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শাল বাংলাদেশের পরিচিত গাছ। গোড়া থেকে চারা গজায় বলে এই গাছকে গজারি নামে চেনে ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ। এ গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অথচ শালবনে খুশি মনে চলছে কুঠারের আঘাত। কি দিন, কি রাত প্রতিনিয়ত শালবনে রক্ত ঝরছে।

স্থানীয়রা জানান, কুঠার বাহিনীর সঙ্গে নাকি সখ্য রয়েছে রক্ষকদের। দিনেও নাকি তারা চলে চোখ বন্ধ করে। প্রকৃতির আশীর্বাদে এ বৃক্ষের ওপর এখন আঘাত চলছে অতীতের ন্যায় জোরেশোরে।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি কাটার যেন উৎসব চলছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার কাভার্ডভ্যানের ভেতর থেকে ১০৫টি গজারি গাছের টুকরো জব্দ করে বন বিভাগ। ওই দিনই একটি মিনি ট্রাকভর্তি গজারি এবং আকাশমনির ২১৭ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়।

বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের তথ্যমতে, ঘাটাইল উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। ৯০-এর দশকে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি আঘাত হানে প্রাকৃতিক এ বনে। দেশি বৃক্ষের স্থানে ক্রমে জায়গা দখল করে নেয় বিদেশি বৃক্ষ। বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক অন্য সব গাছের সঙ্গে শাল-গজারিও। অবশিষ্ট যা ছিল, তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এর জন্য এলাকাবাসী দায়ী করলেন বন বিভাগের লোকসহ অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী এবং কাঠচোর চক্রকে।

একটা সময় কাঠচোর চক্র কেবল রাতে শালগাছ কাটত। কিন্তু সরেজমিন বন বিভাগের বটতলা ও ঝড়কা বিটের অন্তর্গত বগা, খাগরাটা, কুশারিয়া ও ছনখোলা এলাকায় দেখা যায়, লোকচক্ষুর আড়ালে নয়, প্রকাশ্যে খুশি মনে এক শ্রেণির লোক নিষিদ্ধ বৃক্ষ কেটে যাচ্ছে।

বটতলী ও ঝড়কা বিট অফিসের ছনখোলা ও কুশারিয়া এলাকা থেকে গত শনিবার একটি কাভার্ড ভ্যান বোঝাই গজারি গাছ এবং মিনি ট্রাক বোঝাই গজারি এবং আকাশমনির জ্বালানি কাঠ জব্দ করে বন বিভাগ।

বন বিভাগের ওই দুই বিটের দায়িত্বে আছেন হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, কাভার্ডভ্যানটি বটতলী বিটের ছনখোলা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে ভ্যানের চালক বা অন্য কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কাভার্ডভ্যানে গজারি গাছ ছিল ১০৫টি।

একইদিন ঝড়কা বিটের কুশারিয়া এলাকা থেকে মিনি ট্রাকবোঝাই গজারি এবং আকাশমনির জ্বালানি কাঠ আটক করা হয়। যাতে ২১৭ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ ছিল। এ ব্যাপারে আবদুল হালিম নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গাছ সহ দুটি গাড়িই জব্দ করে ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসে রাখা হয়েছে।

হেলাল উদ্দিন আরও জানান, ৩ জানুয়ারি বটতলী বিটের অধীনে বড় আকারের আরও সাত টুকরো গজারি গাছ আটক করা হয়।

জানা যায়, শাল-গজারি বন সুরক্ষিত রাখতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটাইল উপজেলায় সুফল প্রকল্প চালু করে সরকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রাকৃতিক বন রক্ষায় বেলা কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মধুপুরের শালবন রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। রিট পিটিশনের জন্য আদালত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। তথ্য-প্রমাণ পেলে ঘাটাইলের বন রক্ষায়ও একই কাজ করা হবে।

শালবন উজাড় করে প্রকৃতি ধ্বংস করার বিষয়ে কথা হয় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘শালবন হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। জীববৈচিত্র্যের ব্যালেঞ্চ (ভারসাম্য) রক্ষার জন্য শালবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের পক্ষে এ ধরনের শালবন সৃজন করা অনেকটাই অসম্ভব। তাই এ বন রক্ষার্থে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

গজারি গাছ জব্দ করার কথা স্বীকার করেন ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদ রহমান। তাঁর ভাষ্য, বন বিভগের জনবল কম। এ গাছ রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংবাদ টি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2024 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102
Verified by MonsterInsights